হাজারী গুড়ের নাম মিশে আছে মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যের সাথে। জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা গ্রামের অন্তত ২৫/৩০ টি পরিবার এই গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণান্ত চেষ্টা।
স্থানীয় এই হাজারী গুড়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত। কথিত আছে ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথকে উপহার স্বরুপ পাঠানো হয়েছিল এই গুড়। তিনিও এই গুড় খেয়ে করেছিলেন ভূয়সী প্রশংসা।
হরিরামপুরে প্রতি একরে খেজুর গাছ আছে প্রায় ১৫ টি করে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে খেজুর গাছ একটা শিল্পে পরিণত হয়। রস আর গুড় উৎপাদনে পেশাদার গাছি, কুমার ,কামার, জ্বালানী ব্যবসায়ী, পরিবহনের জন্য ট্রকা মালিক, চালক, ভ্যান চালক, শ্রমিক আরতদারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এতে যুক্ত থাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুইশত বছরের আগে ঝিটকা গ্রামের হাজারী প্রামানিক নামের এক ব্যক্তি এই গুড়ের প্রবর্তক ছিলেন। তার নামানুসারেই এর নামকরন হয়েছিল হাজারী গুড়। এই গুড়ের একটি লক্ষনীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দু’হাতে গুড়ো করে ফুঁ দিলে তা ছাতুর মত উড়ে যায়। কারণ এই গুড় তৈরির প্রধান উপাদান খেজুরের রস।
ঝিটকা এলাকার রাশেদুল হাজারী জানান, ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা এই গুড় উৎপাদনের নির্ভরযোগ্য সময়। গুড় তৈরির আগের দিন বিকেলে গাছ কেটে হাড়ি বেঁধে দেয়া হয়। পরদিন সূর্য উঠার আগে গাছ থেকে রস নামিয়ে পরিস্কার করে ছেঁকে মাটির তৈরী (জালা) পাত্রে চুলায় (বাইনে) জ্বাল দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে গুড় তৈরী করা হয়।
তবে এই পদ্ধতি এখন আর হাজারী পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। স্থানীয় অনেক গাছিদের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়েছে। হাজারী গুড় দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমন সুস্বাদু। মিষ্টি ও টল টলে রস ছাড়া হাজারী গুড় তৈরি করা সম্ভব নয়। এবছর প্রতিকেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ১৬ শ থেকে ২ হাজার টাকায়।
তিনি আরো জানান, এক শ্রেণীর অসাধু লোকেরা হাজারী সাদৃশ্য গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে। এরা ভেজাল গুড়ের উপর নাম খোদাই করে এসব গুড় বাজারজাত করে সরল মানুষদের ধোকা দিচ্ছে।
তবে যে হারে ইটের ভাটায় খেজুর গাছের লাকড়ি পোড়ানো হচ্ছে তাতে করে একদিন খেজুর গাছই খুজে পাওয়া যাবেনা। এই গুড় উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে খেজুর রস। সরকারী ভাবে উদ্যোগ না নিলে ঐহিত্যবাহী এই গুড়শিল্প একসময় কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে বলে এই সংশ্লিষ্টরা দাবী করেছেন।
গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে নতুন করে খেজুর গাছ লাগানো এবং ভেজাল গুড় উৎপাদন বন্ধ করতে প্রশাসন সচেষ্ট আছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ।
সবখব/ নিউজ ডেস্ক