মানিকগঞ্জ-২ আসনে নৌকায় ভোট না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের গুলি করে হত্যার হুমকি দাতা সিংগাইর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলী ইস্কান্দারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলঅ করেছেন। এছাড়া হরিরামপুরে নৌকা প্রতিকে ভোট না দিলে হত্যার হুমকি ও নির্বাচনের পর দেশ ত্যাগের হুমকির অভিযোগে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ফরিদ মোলার বিরুদ্ধেও পৃথক একটি মামলা হয়েছে।
মামলার এজাহার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদের কর্মী শাহিনুর ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, মো. মিনহাজ স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতীকে ভোট চেয়ে ছোট পোস্টার (হ্যান্ড বিল) বিতরণ করছিলেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আলী ইস্কান্দার। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের হাত কেটে নেওয়াসহ নানা হুমকি-ধামকি দেন।
আলী ইস্কান্দারকে উচ্চস্বরে বলছেন, ‘এবার আমার দেখার আছে। আমি তো কেন্দ্রের ভেতরে থাকবো। নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে হাত কাইটা (কেটে) ফালামু (ফেলবো)। রেডি (প্রস্তুত) থাইকো। সাহস থাকে পাল্লা লইবা আমার লগে। কে আছে আমার এগিনেষ্টে (বিরুদ্ধে) যাবে। লজ্জা করে না তোমাদের। দেখার আছে আমার। খোদার কসম, দেখার আছে এই বার। চৌদ্দ শিকে ঢুকাইয়া ছাইরা দিমু। সরকার আমার, পাওয়ার আমার, প্রশাসন আমার, এমপি আমার। যাইও ভোট দিবার যাইও ট্রাক মার্কায়। ট্রাকের চাকার তলে ফালাই দিমু।ফাজলামো। হাড্ডি মাংস এক কইরা ফালামু প্রত্যেকটাকে গুলি করবো।’
আওয়ামী লীগের ওই নেতার এই ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে যুগান্তরসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশিত হয়।বুধবার হত্যার হুমকির ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ নিজ সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ ঘটনায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৭৩(২খ)/৮৪ক ধারার অপরাধে আওয়ামী লীগ নেতা আলী ইস্কান্দারকে আসামি করে সিংগাইর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম উল্লেখ করেন, আসামির এ ধরণের বক্তব্য ভিডিওর মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতির সৃষ্টি হয়। এতে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবৈধভাবে প্রভাব খাটানোর অভিপ্রায় প্রকাশ পায়। মামলা বিষয়ে সিংগাইর থানার পরিদর্শক(তদন্ত)মানবেন্দ্র বালো বলেন,আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
হরিরামপুরেও হুমকির ঘটনায় মামলা: একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর ট্রাক প্রতিকের এক কর্মীকে নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে হত্যাসহ নির্বাচনের পর দেশ থেকে বিতারিত করার হুমকির অভিযোগে হরিরামপুর থানায পৃথক একটি মামলা হয়েছে।
এ ঘটনায় ভূক্তভোগী স্বতন্ত্র প্রার্থী কর্মী শাখাওয়াত হোসেন বাদি হয়ে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও নৌকার কর্মী ফরিদ মোল্লা ও রিফাত চৌধুরীসহ অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে হরিরামপুর থানায় মামলা করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে,বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হরিরামপুরের কৌড়ি এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহম্মেদের কর্মী শাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তাঁর হাতে নৌকা প্রতীকের লিফলেট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে বলেন যুবলীগের নেতা ফরিদ মোল্লা। এতে রাজি না হওয়ায় ফরিদ ও রিফাতসহ অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জন তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।নৌকায় ভোট না দিলে নির্বাচনের পর দেশ ত্যাগের হুমকিও দেয়া হয়। এবং ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের পর এই দেশে কি ভাবে থাকস আমি তা দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয় । সেই সাথে ঝিটকা বাজারে কিভাবে ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা করস তা আমি দেখে নিব। আর যদি একদিন শুনি ট্রাক মার্কার নির্বাচনে কারো কাছে ভোট চাস তাহলে তোকে জানে মেরে ফেলব বলে হুমকি দেন।
এ ব্যাপারে যুবলীগের নেতা ফরিদ মোল্লা দাবি করে বলেন, ‘শাখাওয়াত বিএনপির কর্মী। বিএনপির ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ করছিলেন। এ কারণে তাঁর সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। যে অভিযোগে মামলা করেছেন তা মিথ্যা।’