বিজ্ঞান, আবেগ, কাব্য- বাস্তবতার প্রতিমূর্তি

রাসেল

১৯৩১ সালের দিকে “এ বিশ্ব লয়ে যে বিরাট শিশু খেলছেন” তিনি ই হয়ত মজা দেখতে চেয়েছিলেন দুই মেরুর দুই বিখ্যাত লোক কে মিলিয়ে দেখতে আসলে কী ঘটে!

একজন হলেন নির্বাক রুপালী পর্দার কালজয়ী অস্কার জয়ী অভিনেতা কমেডিয়ান ও চলচ্চিত্রকার চার্লি চ্যাপলিন; আরেকজন ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইন্সটাইন,আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে যিনি সারা বিশ্বে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন।

চার্লি চ্যাপলিন অভিনীত ও পরিচালিত নির্বাক চলচ্চিত্র “সিটি লাইট” এর প্রিমিয়ার শোতে চার্লি নিমন্ত্রণ করেন পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইন্সটাইন কে।

আইনস্টাইন ও রসবোধে কম যান না।তার সমপর্কে হাজারো মজার ঘটনা প্রচলিত বিভিন্ন গ্রন্থে।

“একবার আইন্সটাইন ট্রেন ভ্রমণ করছিলেন।টিকেট চেকার টিকেট দেখতে চাইলে আইন্সটাইন পকেট হাতরে খুজতে থাকেন।কিছুতেই খুজে পাচ্ছিলেন না।চেকার তাকে চিনে ফেলে নিজেই বিব্রত বোধ করে বলে,”স্যার আপনাকে চিনতে পেরেছি।টিকেট খুজতে হবেনা।”নাছোড়বান্দা আইনস্টাইন বলেন,”অবশ্যই খুজতে হবে।কারণ টিকিটেই লেখা আছে আমি কোথায় যাচ্ছিলাম। আমার তো তাহলে গন্তব্যে পৌছুতে সমস্যা হবে,আমি জানিনা কোথায় যাচ্ছি।”তখন চেকার অবাক হন -“এই ভুলোমনের লোক কী করে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব দিয়ে নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন!”

বলা হয় চার্লি চ্যাপলিনের সিটি লাইট ছবির প্রিমিয়ার শোতে আইনস্টাইন চার্লি চ্যাপলিন কে সম্মান দেখাতে তার মতো হ্যাট আর হাতে লাঠি নিয়ে হাজির হন।

ছবির প্রিমিয়ার শো শেষে অস্কারজয়ী চার্লি চ্যাপলিন আর নোবেল জয়ী আইনস্টাইন যখন হেটে যাচ্ছিলেন তখন জনগণ তাদের একটু ছুয়ে বা কাছ থেকে দেখবার জন্য পাগলের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল।

আইনস্টাইন চার্লিকে বলছিল,”তুমি তোমার ছবিতে কিছুই বলনা অথচ সবাই তোমাকে বোঝে আর তুমি কত জনপ্রিয়,এর কারণ কি?”

চার্লি ও ছেড়ে দেবার পাত্র না।সে ও বলে,”যেমন করে তুমি জনপ্রিয় তোমার তত্ত্বগুলো সবাই না বোঝার কারণেই!”

তারপর এই দুই রসবোধসম্পন্ন মানুষ হাসতে হাসতে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ শেষ করেন।

তারপর আর তাদের আর দেখা হয়েছিল কিনা কারো জানা নেই।

কিছুদিন আগে হলিউড এ ঘটনা টি তাদের মেমোরি তে শেয়ার করে অবিস্মরণীয় ঘটনা হিসেবে।

কিন্তু এ ঘটনা টিকে অনেক দার্শনিকগণ বিজ্ঞান এবং আবেগের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য হিসেবে উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন।

বিশ্বকবি নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথের সাথেও আইনস্টাইনের সাক্ষাৎ ঘটেছিল।

রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনের সেবার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। রবীন্দ্রনাথ ঘর থেকে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এইমাত্র আপনি একজন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বললেন, আপনার প্রতিক্রিয়া কী?’

রবীন্দ্রনাথ উত্তর দিলেন, ‘আমি তো একজন বিশ্বখ্যাত কবির সঙ্গে কথা বললাম।’

এরপর সাংবাদিকেরা আইনস্টাইনের সঙ্গে দেখা করে বলেন, ‘আপনি একজন বিশ্বকবির সঙ্গে আলাপ করলেন, আপনার প্রতিক্রিয়া কী?’

আইনস্টাইন জবাব দিলেন, ‘আমি কবির সঙ্গে কথা বলিনি, আমি একজন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বলেছি।”

বাস্তবে বিজ্ঞান সকলের জন্য দুর্বোধ্য হলেও তা বাস্তবিক আর আবেগ ও বাস্তবিক,কবিতা তথা সাহিত্য ও বাস্তবের কথাই বলে।সাদৃশ্য আর বৈসাদৃশ্য মিলেই বিজ্ঞান,কবিতা-সাহিত্য, আবেগ এর সমন্বয়েই বাস্তবতা।

লেখক: কাজী একেএম রাসেল, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ।

নিউজটি শেয়ার করুন
Scroll to Top