বন্ধ মিল দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ মোটা অংকের টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার মেসার্স খন্দকার ফ্লাওয়ার মিলস্’র স্বত্তাধিকারী হাসান খন্দকারের বিরুদ্ধে।
তিন কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আদালতে সাতটি আলাদা মামলা হয়। ইতিমধ্যে দুটি মামলায় তার ১০ মাস কারাদন্ড এবং ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড হয় এবং অন্য মামলাগুলি বিচারাধীন রয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
আদালত থেকে প্রাপ্ত নথিপত্রে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের যুগ্ম দায়রা জজ প্রথম আদালতের যুগ্ম জজ কামরুন নাহার চলতি বছরের ১১ এপ্রিল হাসান খন্দকারকে চেক জালিয়াতির দায়ে আট মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং আট লাখ টাকা অর্থ দন্ড করেন।
সাজাপ্রাপ্ত হাসান খন্দকার মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার নিহালপুর গ্রামের মৃত ইয়ার আলী খন্দকারের ছেলে। জেলার হরিরামপুর উপজেলার মাচাইন গ্রামের রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর কাছ থেকে ২০২০ সালের ৩ মার্চ হাসান খন্দকার আট লাখ টাকা ধার নেয়। তিন মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও সে টাকা পরিশোধ না করে তাকে ঘুরাতে থাকে। একপর্যায়ে হাসান খন্দকার রফিকুল ইসলাম চৌধুরীকে আট লাখ টাকার দুটি চেক দেয়।কিন্তু টাকা তুলতে সাউদিষ্ট ব্যাংক লিমিটেড ঘিওর শাখায় গিয়ে দেখা যায় তার একাউন্টে কোন টাকা নেই। এরপর আদালতে চেক ডিজনারের মামলা করেন রফিকুল ইসলাম চৌধুরী।
অন্য একটি টাকা আত্মসাতের মামলায় গত বছরের ১৪ নভেম্বর হাসান খন্দকারকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করে আদালত। শিবালয় উপজেলার উথলী বাজারের আটা ও ভুসিমালের ব্যবসায়ী মদন সাহার কাছ থেকে গমের ভুসি দেওয়ার কথা বলে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়। পরে, মাল না দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে। বাধ্য হয়ে মদন সাহা আদালতে মামলা করে। মামলা নম্বর-৬৬৬/২১ শিবালয়।
এছাড়া, পাবনার বেড়া উপজেলার চরনাগদহ গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম হাসান খন্দকারের বিরুদ্ধে ৯০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৩০ নম্ভেম্বর হাসান খন্দকার তার ফ্লাওয়ার মিল এবং গোডাউন পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া বাবদ জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে জামানত হিসেবে ছয় লাখ টাকা নগদ গ্রহণ করে। আট মাস মিল চালানোর পর, হাসান খন্দকার জাহাঙ্গীর আলমকে তার কর্মচারীদের মারধর করে মিল থেকে বের করে দেয় এবং ৭৫ লাখ টাকার গম, আটা ও অন্যান্য মালামালসহ মিল দখল করে নেয়।এতে জাহাঙ্গীর আলমের ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে আদালতে মামলা করেন তিনি।
বেকারী, সারের ডিলার ও ফ্লাওয়ার মিলের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে হাসান খন্দকার তার চাচা লিটন খন্দকারের কাছ থেকে ২০২০ সালের ১০ জুলাই ৭৮ লাখ ধার নেয়। ছয়মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও সে টাকা ফেরত না দিয়ে তাকে ঘুরাতে থাকে। এক পর্যায়ে সে গত বছরের ২৩ জুন উত্তরা ব্যাংক শিবালয় শাখার একটি চেক দেয়।৭৮ লাখ টাকার ওই চেকটি ডিজনার হয়। পরে লিটন খন্দকার হাসান খন্দকারের রিুদ্ধে আদালতে চেক ডিজনারের মামলা করেন। মামলা নম্বর-২৩২(শিবা:)/২০২২।
এছাড়াও, মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক থেকে ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। কিন্তু বাকী টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ১০ লাখ টাকার একটি চেক দিলেও তা ডিজনার হয়। পরে হাসান খন্দকারের বিরুদ্ধে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আদালতে একটি মামলা করা হয়।মামলা নম্বর-১২৫৮(মানিক)/২০২২।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখিত মামলা ছাড়াও খুলনা ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় তার নামে আরও প্রতারণার মামলা রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
হাসান খন্দকারের বিরুদ্ধে এসব টাকা আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন মাহবুব আলম নামের এক ব্যবসায়ী। হাসান খন্দকারের কাছ থেকে আর কেউ যাতে প্রতারিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই অভিযোগ করেছেন বলে জানান মাহবুব আলম।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে, অভিযুক্ত খন্দকার ফ্লাওয়ার মিলস্’র স্বত্ত্বাধিকারী হাসান খন্দকার বলেন, ‘আমার মিলটি পাবনার জাহাঙ্গীরের কাছে ভাড়া দিয়েছিলাম। পরে তার সাথে বনিবনা না হওয়ায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় তার সমাধান হয়েছে। যেদুটি মামলায় সাজা হয়েছে, সে দুটি মামলায় আমি জামিনে আছি। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করেছি তার প্রমাণ রয়েছে। বাকী মামলা চলমান রয়েছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেমন মামলা রয়েছে। আবার আমিও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। ওইসব মামলাও চলমান রয়েছে।’
সবখবর/ নিউজ ডেস্ক