বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহারুল ইসলাম আর নেই

বীরমুক্তিযোদ্ধা

বর্ষীয়ান বাম রাজনৈতিক, সমাজ সংগঠক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রবীণ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আজাহারুল ইসলাম (৭০) আর নেই।

গতকাল রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে মানিকগঞ্জ শহরের পশ্চিম দাশড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভূগছিলেন।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ আত্মীয়-স্বজন ও আদর্শের উত্তরসূরীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

পারিবারিক এবং দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজাহাজারুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র হিসেবে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং বুলগেরিয়া থেকে সমাজবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর কর্মজীবনের শুরুটা শিক্ষকতা দিয়ে। মানিকগঞ্জ সদরের খাবাশপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মানিকগঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তাঁর। ছাত্রজীবন থেকেই বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মানিকগঞ্জ জেলা শাখা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। সিপিবির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অর্জনে রাশিয়া, বুলগেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে একাধিকবার সফর করেছেন।

তিনি জেলা সদরে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ছাড়া আরও বেশকয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেতে তাঁর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। উদীচী, খেলাঘর আসর এবং প্রথম আলো মানিকগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৯১ সালে মানিকগঞ্জ-৩ (মানিকগঞ্জ সদর- সাটুরিয়া) কাস্তে প্রতীকে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেন। এ ছাড়া মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচন করেছেন।

তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সিপিবির জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবুল ইসলাম শিকদার। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিকামী মানুষের জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন। গণমানুষের অধিকার, পরিবেশ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধূলাসহ সমাজের অসংগতি নিয়ে তিনি জীবনভর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তিনি শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে বামধারার নীতি-আদর্শের রাজনীতির ডাক দিয়ে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো।

সিপিবির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান জানান, আজ সোমবার বেলা একটার দিকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাঁর মরদেহ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে নেওয়া হবে। সেখানে যোহরের নামাজের পর তাঁর প্রথম জানাজা এবং গ্রামের বাড়ি জেলা সদরের বাসুদেবপুর গ্রামে আসরের নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান তাঁকে সমাহিত করা হবে।

সবখবর/ নিউজ ডেস্ক

নিউজটি শেয়ার করুন
error: Content is protected !!
Scroll to Top