আজীবন যৌবন ধরে রাখা অনেকেরই স্বপ্ন। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের পরিবর্তনও অনিবার্য। ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়, কুঁচকে যায়, আর মুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট হতে শুরু করে। তবে, বয়স বাড়লে ত্বকের সমস্যা শুধুমাত্র বাহ্যিক কারণে নয়, অভ্যন্তরীণ কারণেও ঘটে থাকে। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন সেই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
অনেকে মনে করেন, শুধু নামী ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ব্যবহার করলেই ত্বক সুন্দর থাকবে এবং বয়সের প্রভাব কমে যাবে। কিন্তু ত্বকের প্রকৃত যত্নের জন্য শুধু বাহ্যিক নয়, অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক উপায় ও সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য নিয়মিত খেলে আপনার ত্বক ও শরীর দুটোই দীর্ঘ সময় সুস্থ ও তারুণ্যময় থাকবে। আসুন, এমন কিছু খাদ্যাভ্যাসের কথা জানি, যা আপনাকে বয়সের ছাপ থেকে মুক্ত রাখতে সহায়ক হতে পারে।
১. দুধ: দুধের মধ্যে এমন কিছু গুণ রয়েছে যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বক ও চেহারার উজ্জ্বলতা ধরে রাখে। এটি রতিশক্তি তৈরি করে, শরীরের শুষ্কতা দূর করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়। দুধে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ, যা দেহকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত দুধ খেলে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়, যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
এছাড়া দুধের নিয়মিত সেবনে চেহারার রং উজ্জ্বল হয় এবং ত্বক কুঁচকে যাওয়ার প্রক্রিয়া ধীর হয়। পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য দুধ একটি প্রাকৃতিক যৌবন ধরে রাখার শক্তিশালী উৎস।
২. রসুন: রসুন শুধুমাত্র রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, এটি শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। রসুনের মধ্যে রয়েছে এলিসিন, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে শরীরের ভেতরে শক্তির প্রবাহ বজায় রাখে। নিয়মিত রসুন খেলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা ত্বকেও তারুণ্য বজায় রাখতে সহায়ক।
এছাড়া রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপার্টি শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া বাড়ায় এবং ত্বককে রোগমুক্ত রাখে। বিশেষ করে যদি ত্বকে পিগমেন্টেশন বা বয়সের কারণে পরিবর্তন আসতে শুরু করে, তাহলে রসুন এটি রোধ করতে সহায়তা করে।
৩. সামুদ্রিক মাছ: সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে স্যালমন, টিউনা বা ম্যাকারেল ত্বক এবং যৌবন ধরে রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর। এই মাছগুলোতে থাকা প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং বলিরেখা রোধ করতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছের অ্যান্টি-এজিং উপাদান ত্বককে টানটান রাখে এবং বয়সের ছাপ আসতে দেয় না।
এছাড়া, সামুদ্রিক মাছ দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করে, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বককে সতেজ রাখে। তাই, যদি আপনি দীর্ঘদিন যুবক এবং সুস্থ থাকতে চান, তাহলে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. মধু: মধু কেবল ত্বকেই নয়, শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া বাড়ায়, ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখে। মধু শরীরের অতিরিক্ত দূষিত পদার্থ বের করে দেয় এবং সঠিকভাবে পুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করে।
বিশেষ করে যদি আপনার ত্বক শুষ্ক থাকে বা বলিরেখার সমস্যা থাকে, তবে নিয়মিত মধু খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। মধু ত্বকের তারুণ্য ফিরিয়ে আনে এবং বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
৫. অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল রান্নার জন্য এক অত্যন্ত জনপ্রিয় উপাদান হলেও এটি ত্বক রক্ষায়ও বেশ কার্যকর। এটি শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং ত্বককে আর্দ্র রাখে। এছাড়া, রাতে ত্বকে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করলে এটি ত্বকের বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল ত্বকে একধরনের প্রাকৃতিক লুব্রিক্যান্ট হিসেবে কাজ করে, যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে, ত্বক থাকে নরম, মসৃণ এবং বয়সের ছাপ মুক্ত।
সবখবর/ নিউজ ডেস্ক