২০২২ সালে অনুষ্ঠিত মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ঘোষিত অবৈধ ফলাফল বাতিল করে প্রকৃত বিজয়ী কে এম বজলুল হক খান (রিপন)-কে বিজয়ী ঘোষণার দাবীতে মানিকগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
আজ শনিবার বেলা দেড়টায় মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তৎকালীন ‘চশমা’ প্রতীকের প্রার্থী, সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী কে এম বজলুল হক খান আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। প্রতিপক্ষ গোলাম মহীউদ্দীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তার পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে তাকে পরাজিত করতে বিভিন্ন ধরণের অপকৌশল প্রয়োগ এবং নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য নগদ টাকা, চাঁদরসহ নানা ধরণের উপটৌকন এবং প্রকাশ্যে খাবার বিতরণ করেন। এ ছাড়া ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার করে প্রতি উপজেলায় প্রকাশ্যে দিবালোকে ভোটারদের একত্রিত করে জোরপূর্বক ভোট আদায় করেন। এ বিষয়ে তিনি মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সকল কমিশনারবৃন্দের নিকট তাৎক্ষণিক আবেদন করেন। বেসরকারিভাবে ঘোষিত অবৈধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে গোলাম মহীউদ্দীনের নাম বিজয়ী হিসাবে গেজেটভূক্ত না করার অনুরোধ করা হলেও গত ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টম্বর নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর থেকে তাকে নানান হুমকি ও হয়রানি মোকাবেলা করতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ গোলাম মহীউদ্দীনের প্রতীক ছিল ‘আনারস’। ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর সাতটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ৯ টায় এবং সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ভোটগ্রহণের শেষ সময় ছিল দুপুর ২ ঘটিকা। কিন্তু হরিরামপুর উপজেলা ভোটকেন্দ্রে প্রতিপক্ষের পূর্বপরিকল্পনা মাফিক কৌশলগত কারণে বিকেল ৪ ঘটিকা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করানো হয় এবং বেসরকারি ফলাফল ঘোষিত হয় বিকাল অনুমান ৫ ঘটিকায়।
তিনি বলেন, যে সব কেন্দ্রে প্রতিপক্ষ ব্যাপক অনিয়ম করিয়েছেন সে সব কেন্দ্রের মধ্যে শিবালয় উপজেলা ভোটকেন্দ্র অন্যতম। দরখাস্তকারীর বিজয় নিশ্চিত জেনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ গোলাম মহীউদ্দীনের বিজয়ের জন্য পূর্বপরিকল্পনা মাফিক শিবালয় উপজেলা ভোটকেন্দ্রের বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ/যান্ত্রিক গোলযোগ-বিভ্রাট সৃষ্টি করে জনৈক নারী ভোটারদের আঙুলের ছাপ মিল না হওয়া সত্বেও তার ভোট অপকৌশল অবলম্বনে গ্রহণ করা হয়। উক্ত ঘটনায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, শিবালয় উপজেলা ভোটকেন্দ্রে নিখুঁতভাবে ভোট কারচুপি করা হয়েছে। ভোট গণনার পূর্বেই প্রিজাইডিং অফিসার তার অধীনস্তদের গোলাম মহীউদ্দীনের পক্ষে ফলাফল ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করেন, যাতে তার উপর কোনো দায়ভার না বর্তায়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, উক্ত কেন্দ্রে আমার প্রাপ্ত ভোটকেই গোলাম মহীউদ্দীনের প্রাপ্ত ভোট বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এমতাবস্থায় আমি শিবালয় উপজেলা ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ফলাফলের প্রিন্ট কপি প্রাপ্ত হলে এবং বিজ্ঞ জেলা পরিষদ নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ইভিএম এক্সপার্ট দ্বারা পরীক্ষিত হলে সঠিক ফলাফল বের হয়ে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল ভোটের দিন কোনো কেন্দ্রেই বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে না। কিন্তু প্রতিপক্ষ কর্তৃক ভোট কারচুপির অপর একাটি কেন্দ্র হইলো ঘিওর উপজেলা। সকাল থেকেই ঘিওর উপজেলা ভোটকেন্দ্রের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে কেন্দ্রটি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ/মনিটরিং এর বাইরে থাকে। এরপর তারা নির্বিঘ্নে ভোটারদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট আদাল করে নেন। উল্লেখ্য যে, আমি বিশ্বস্ত সূত্রে আগেই বিষয়টি অবগত হয়ে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার/কমিশনারবৃন্দ ও সচিব মহোদয়কে লিখিতভাবে অবহিত করি। এ ছাড়াও ফলাফল প্রকাশ করার সময় দরখাস্তকারীর প্রাপ্ত ভোটকে প্রতিপক্ষ গোলাম মহীউদ্দীনের ভোট বলে প্রকাশ করা হয়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, উক্ত কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার/সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ দরখাস্তকারীর এজেন্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে এবং ভোট সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় বিজ্ঞ ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক পরীক্ষিত হলে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে সঠিক ফলাফল বের হয়ে আসবে।’
এ ছাড়া দৌলতপুর উপজেলা ভোটকেন্দ্রে সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ আমার এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে জোরপূর্বক ভোট আদায় করে নেন এবং আমার পক্ষে চিহ্নিত ভোটারদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট প্রদান থেকে বিরত রাখেন। উক্ত ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার ছিলেন জনাব মো. রেজাউল হক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, দৌলতপুর, মানিকগঞ্জ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, উক্ত কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার/সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ আমার এজেন্টদের বিজ্ঞাসাবাদ করলে এবং ভোটসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পরীক্ষিত হলে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে সঠিক ফলাফল বের হয়ে আসবে বলেও জানা তিনি।
তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ কর্তৃক ভোট কারচুপির আরেক অভয়ারণ্য তৈরি করেছিলেন হরিরামপুর উপজেলা কেন্দ্রে। গোলাম মহীউদ্দীন পূর্বপরিকল্পিতভাবে হরিরামপুর উপজেলার ভোট কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়ে কৌশলগত কারণেই বেলা ৯ ঘটিকার পরিবর্তে ১১ ঘটিকা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু করানো হয় এবং নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও বিকাল ৩ ঘটিকা পর্যন্ত তারা ভোট আদায় করে নেন। এ ছাড়া ভোট গণনার পূর্বেও বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে ভোটকেন্দ্রটি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ/মনিটরিংয়ের বাইরে চলে যায় এবং তাদের পক্ষে ফলাফল তৈরি করে ঘোষণা করিয়ে নেন। উক্ত কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৬ এর ৩৭ বিধি মোতাবেক নির্বাচন বন্ধ রাখার কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। রিটার্নিং অফিসারের বরাবর লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো সত্বেও আমাকে কোনো ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে দেওয়া হয়নি। অপর দিকে আমার প্রতিপক্ষ অবাধে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনসহ ভোটারদের উপর প্রকাশ্যে প্রভাব বিস্তার করে ভোট দিতে বাধ্য করেন। হরিরামপুর উপজেলা ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার/সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ আমার এজেন্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে এবং ভোট সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পরীক্ষিত হলে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে সঠিক ফলাফল বের হয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ গোলাম মহীউদ্দীনের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের পূর্বেই সিংগাইর উপজেলা কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশিত হয়। তাতে আমি ১১৭ ভোট এবং প্রতিপক্ষ মাত্র ৩৮ ভোট এবং সাটুরিয়া উপজেলায় আমি ৬০ ভোট এবং প্রতিপক্ষ ৫৮ ভোট প্রাপ্ত হলে প্রতিপক্ষ অন্যান্য কেন্দ্রে বেপরোয়া হয়ে কারচুপির নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে থাকেন। সর্বপরি শত অনিয়মে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি ৪২৫ ভোট এবং প্রতিপক্ষ ৪৫২ ভোট পেয়েছেন মর্মে ফলাফল ঘোষিত হলেও প্রকৃতপক্ষে আমার প্রাপ্ত ভোটকেই প্রতিপক্ষের প্রাপ্ত ভোট দেখিয়ে আমাকে সুপরিকল্পিতভাবে পরাজিত ঘোষনা করা হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন- ২০২২ এর সকল কেন্দ্রের ভোট আইনের বিধানমতে গ্রহণ করা হয়নি। প্রতিপক্ষের আচরণ ও কার্যাবলী দ্বারা জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৬ এর ৬৯, ৭০, ৭৩ এবং ৭৫ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। কাজেই উক্ত নির্বাচনের সাজানো ফলাফল বাতিল করে সঠিক ফলাফল ঘোষিত হলে আমি বিজয়ী হতাম বলে আমার গভীর বিশ্বাস।
এসময়, সাবেক জেল সুপার হেলাল উদ্দিন, স্টেডিয়াম রোড জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ, মৌহালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম হেনা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শফিউর রহমান প্রমুখ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।