আজ ১৩ই ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। একাত্তরের এই দিনে মুক্তি পাগল দামাল ছেলেরা এ জনপদ থেকে পাকিস্তানি হানাদারদের বিতাড়িত করে উড়িয়ে ছিল বিজয়ের পতাকা।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্রাক-ডাউনের খবর পাওয়ার পর পরই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য মানিকগঞ্জে তৎকালীন এমএলএ খন্দকার মাজাহারুল হক চাঁন মিয়াকে চেয়ারম্যান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২৫ মার্চ রাতে মানিকগঞ্জের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি শুরু হয়। মুক্তিকামী মানুষ ট্রেজারি থেকে ছিনিয়ে নেয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই পাকবাহিনীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও ৭টি থানা দখল হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। হরিরামপুরের দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলকে সুবিধাজনক স্থান হিসেবে বেছে নিয়ে বিপ্লবী পরিষদ ঘাটি ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করে। আগষ্টের প্রথম দিকে ঘিওর থানা আক্রমনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা সর্বাত্নক মুক্তিযুদ্ধের শুভ সূচনা করে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জেলার প্রায় সব থানা ত্যাগ করে পাকবাহিনী মহকুমা ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। জেলার সর্বত্রই মুক্তিযোদ্ধারা নিয়ন্ত্রনে নিতে চেষ্টা করলে পাকহানাদাররা ১৩ ডিসেম্বর সকাল বেলা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ১৩ ডিসেম্বর বিজয়ীবেশে মুক্তিযোদ্ধারা দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে সমবেত হন। আওয়ামীলীগ নেতা মাজহারুল হক চান মিয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এবং আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল ছোট বড় ৪২ টি যুদ্ধ। জেলার সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয়েছিল সিংগাইরের গোলাইডাঙ্গায়। ওই যুদ্ধে ৮৩ জন পাকবাহিনীকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা। জেলার বিভিন্ন যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে ৯ জন হয়েছিল পঙ্গু আর ৪ জন তাদের বীরত্বের জন্য হয়েছিল খেতাবপ্রাপ্ত।
সবখবর/ সারাদেশ