আশরাফ লিটন: আজকের বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পেশাটি যেন এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বে জর্জরিত। একদিকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাগত নৈতিকতার প্রশ্ন, অন্যদিকে কিছু স্বার্থান্বেষী ‘সাংবাদিক নেতা’ যারা সাংবাদিকতার চেয়ে তোষামোদ ও সুবিধাবাদীতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদদের দরজায় দরজায় ঘুরে, তাদের খুশি রাখতে নিজেদের অবস্থান ও সংগঠনের নাম ব্যবহার করে চলেছেন তারা। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত সাংবাদিকরা, যারা মাঠে কাজ করেন, সত্য তুলে ধরেন এবং জনগণের পক্ষেই দাঁড়ান।
সাংবাদিক নেতাদের এমন আচরণ কেবল পেশার মর্যাদাকেই ক্ষুণ্ন করছে না, বরং গণমাধ্যমের ওপর জনগণের আস্থাও ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে। যখন সাধারণ মানুষ দেখেন, সাংবাদিকতার ব্যানার ব্যবহার করে কেউ প্রশাসনিক সুবিধা নিচ্ছে, পোস্টিং বদলি করাচ্ছে বা রাজনৈতিক নেতার পাশে ছবি তুলে সেটিকে সাংবাদিকতার ‘প্রাপ্তি’ হিসেবে উপস্থাপন করছে, তখন প্রকৃত সাংবাদিকের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ ম্লান হয়ে যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই নেতাদের দায়ভার কে নেবে? সাংবাদিক সংগঠনগুলো কি এদের স্বেচ্ছাচারিতা রোধে কোনো ভূমিকা রাখছে? নাকি তারাও এই সুবিধাবাদী চক্রের ছত্রছায়ায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে ব্যস্ত? প্রকৃত সাংবাদিকরা যখন বেতন বঞ্চনায় ভোগেন, মামলায় জর্জরিত হন কিংবা নিপীড়নের শিকার হন, তখন এই তথাকথিত নেতা কোথায় থাকেন?
দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন এমন এক অবস্থা তৈরি হয়েছে যেখানে সাংবাদিকতা পেশায় টিকে থাকতে হলে তেলবাজিতে দক্ষতা থাকতে হয়। এটা একটি ভয়ংকর সংকেত। কারণ গণমাধ্যম হলো সমাজের আয়না। যদি সেই আয়নাই বিকৃত হয়, তাহলে সমাজের চেহারা সঠিকভাবে কখনোই প্রতিফলিত হবে না।
তবে আশার কথা হলো, এখনও অনেক তরুণ ও অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা সত্যিকারের সাংবাদিকতা করেন-তাদের কাজই প্রমাণ করে দেয়, এই পেশা এখনো বেঁচে আছে। প্রয়োজন একটি জোরালো প্রতিরোধ-ভিতরে থেকেই। সাংবাদিক সমাজকে নিজেদের নেতাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তোষামোদনির্ভর সাংবাদিকতাকে ‘অবজ্ঞা’ করা এখন শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটা সাংবাদিকতা পেশার অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন।
পরিশেষে বলব-প্রশাসনের পা চাটা নয়, সত্যের পেছনে ছোটা হোক সাংবাদিকতার মূল পরিচয়। আর যারা এই পথচলায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাদেরকে পেশা থেকে দূরে রাখাই হবে সর্বোত্তম প্রতিরোধ।
লেখক-সম্পাদক, সবখবর