আজ আমরা শোকাহত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের অকাল প্রয়াণে এবং শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরীর নির্মম মৃত্যুকে স্মরণ করছি। ইব্রাহিম খাঁর ‘ভাঙা কুলো’ গল্পের সেই বিখ্যাত লাইনটি মনে পড়ে, যেখানে ‘বড় মিঞা’র মতো গুণী মানুষদের নাম হয়তো সরকারি খাতায় না থাকলেও, মানবতার ইতিহাসে সোনার হরফে লেখা থাকে। মাহেরীন চৌধুরী এমন এক শিক্ষক ছিলেন, যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে শিক্ষার্থীদের বাঁচিয়েছেন।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কথায়, “যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মায় না।” আজকের সমাজে সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষদের স্বীকৃতি কম, তাদের অবদান প্রায় ভুলে যাওয়ার পথে। মাহেরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগ শুধু বীরত্ব নয়, এটি নৈতিক দায়বোধ ও শিক্ষকের পেশাগত সম্মানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
২১ জুলাইয়ের ভয়াবহ আগুনে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বহু শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেন, নিজেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে পরবর্তীতে প্রাণ হারান। তার এ আত্মত্যাগ ছিল দীর্ঘদিনের চেতনার ফল, যেখানে শিক্ষকতা ছিল শুধুমাত্র পাঠদান নয়, মানবিক দায়িত্ব ও ভালোবাসার জীবন্ত প্রকাশ।
মাহেরীন চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রত্যেক শিশুর জন্য উন্নত শিক্ষার সুযোগ, বিশেষ করে গ্রামের শিশুদের জন্য। তার জীবন ও কর্ম আমাদের শেখায়, একজন শিক্ষক কখনো শুধু শিক্ষকের নয়, প্রয়োজনে বীর ও অভিভাবকও হতে হয়।
তার নাম শুধু স্মৃতিস্তম্ভে নয়, আমাদের হৃদয়ে, শিক্ষা ও নৈতিক চেতনায় সোনার হরফে লেখা থাকবে। তার আত্মত্যাগ আমাদের জন্য এক চিরন্তন শিক্ষা — শিক্ষা হবে দায়বদ্ধ, ভালোবাসা হবে সাহসিকতায় পূর্ণ, এবং শিক্ষকতা হবে জীবনের সর্বোচ্চ দায়।