মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় একটি মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশি ও দলের এক নেতাকে প্রধান অতিথি করায় ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে (প্রিন্সিপাল) আটক করে পুলিশ। প্রায় ১৪ ঘণ্টা আটকে রাখার পর গতকাল রোববার দুপুরে মুচলেখা নিয়ে থানা হেফাজত থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশি ওই নেতার অনুসারি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে (সিঙ্গাইর, হরিরামপুর এবং সদরের তিনটি ইউনিয়ন) মনোনয়নপ্রত্যাশি জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ ওরফে টুলু। ওই মাদ্রাসায় ওয়াজ মাহফিলে জাহিদ আহম্মেদকে প্রধান অতিথি করা হয়। এতে ক্ষুব্দ হয়ে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের অনুসারি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিরোধিতা করায় পুলিশ মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে আটক করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ এবং সংসদ সদস্যের অনুসারি নেতারা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং একই নির্বাচনী আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশি হওয়ায় জাহিদ আহম্মেদের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চলে আসছে। গতকাল রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহও করেছেন জাহিদ আহম্মেদ। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্ধ আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার উপজেলার চর নয়াডাঙ্গী-কিটিংচর জামিয়া জমিরিয়া সিদ্দিকিয়া হায়েত আলী মাদ্রাসা ও এতিমখানার উগ্যোগে গতকাল রোববার বাদ আসর ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। মাদ্রাসার ১৯তম বার্ষিক এই ওয়াজ মাহফিলে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা জাহিদ আহম্মেদকে প্রধান অতিথি করা হয়। ওয়াজ মাহফিলে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকে কোনো অতিথি করা হয়নি। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশি জাহিদ আহম্মেদকে প্রধান অতিথি করায় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের অনুসারি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর পর গত শনিবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ উপজেলার দেউলি গ্রামের বাড়ি থেকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মুফতি মহিউদ্দিন কাসেমীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টা থানা হেফাজতে আটকে রাখার পর পুলিশ অধ্যক্ষকে ছেড়ে দেয়।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মহিউদ্দিন কাসেমী বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্রামের বাড়িতে আসি। এর পর পিকআপ ভ্যানে করে পুলিশ এসে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। আজ (গতকাল রোববার) বেলা একটার দিকে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’ কেন আটক করা হয় জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল আলিম খান বলেন, সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম একজন নারী। এ কারণে মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে তাঁকে অতিথি করা অথবা দাওয়াত দেওয়া হয়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, দলীয় মনোনয়নসংগ্রহকারী জাহিদ আহম্মেদকে ওই ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথি করায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে আটক করা হয়। তবে পরে পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তবে তিনি কল ধরেননি।
তবে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের অনুসারি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক শহিদুর রহমান বলেন, ‘তিনি (জাহিদ আহম্মেদ) তো প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হচ্ছেন। আমরা তো কাউকে বাধা দিচ্ছি না। মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে (অধ্যক্ষ) আমরাই তাঁকে ছাড়ালাম। এখন আমাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, ওই মাদ্রাসার ওয়াজকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষে মধ্যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এবং আইনশৃঙ্খল পরিস্থিতির আশঙ্কা মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে মুচলেখা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সবখবর/ নিউজ ডেস্ক