মানিকগঞ্জের কৃতি সন্তান সাইফুর সেলিম, একজন সৎ ও গুণী ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে লেখক, গবেষক, সুরকার, গীতিকার এবং শাস্ত্রীয় সংগীতের ধারক ও বাহক। মানিকগঞ্জে তিনি ওস্তাদ সেলিম নামে সুপরিচিত।
সাইফুর সেলিম দেশের সুনামধন্য বেশ কয়েকজন ওস্তাদের নিকট শাস্ত্রীয় সংগীত, নজরুল ও রবীন্দ্র সংগীতের তালিম নিয়েছেন। তার মধ্যে ওস্তাদ আফতাব হোসেন খান (বাঁকা), ফরিদা ইয়াসমিন মায়া, পন্ডিত সুনীল কুমার চক্রবর্তী, পন্ডিত কৃষ্ণপদ মন্ডল, পন্ডিত সুনীল কুমার মন্ডল এবং দেশের বরেণ্য রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ফেরদৌসী লীনা উল্লেখযোগ্য।
শাস্ত্রীয় সংগীতে অগাধ পান্ডিত্য লাভ করা সাইফুর সেলিম শুদ্ধ সংগীতের বিকাশে “রাগরস” নামে একটি সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী সংগীতে তালিম নিয়ে সংগীতাঙ্গনে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন।
২০১৮ সালে তিনি কোমলমতি সংগীত শিক্ষার্থীদের জন্য “সংগীতের হাতেখড়ি রাগরস” বইটি প্রকাশ করেন। এই বইটি সংগীত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো, যা রাগ, ঠাট ও তালের সঠিক ধারণা প্রদান করে। বর্তমানে, তিনি “রাগ সঞ্চালন” নামে একটি শাস্ত্রীয় সংগীত শেখার বই লেখার কাজ শেষের দিকে। আশা করছেন, আগামী একুশে বই মেলায় এটি প্রকাশ করতে সক্ষম হবেন।
সাইফুর সেলিম আমার দীর্ঘ দিনের পরিচিত। তার মতো সৎ এবং গুণী ব্যক্তিত্বের সাথে পরিচিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। এমন গুণী ব্যক্তিরা শুধু লেখার জন্য লেখেন না, তারা সমাজ ব্যবস্থাকে তুলে ধরে সমাজের জঞ্জাল পরিষ্কার করে আগামী দিনের উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখান। আমি আশা করছি, তার লেখা গ্রন্থগুলি পাঠক সমাজে সমাদৃত হবে। গান ও কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি সুরকার, গীতিকার ও সংগীত গবেষক হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছেন।
সাইফুর রহমান সেলিম (সাইফুর সেলিম) ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। তার ভালোবাসা এবং সুরের প্রতি ভালো লাগা থেকেই গান শেখার আগ্রহ তৈরি হয়। শ্রদ্ধেয় মেঝো ভাই মিজানুর রহমানের কাছ থেকে গানের স্কুলে ভর্তি হওয়ার বায়না ধরা, এবং এর পর জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মানিকগঞ্জে ভর্তি হয়ে সংগীতে হাতেখড়ি নেন। ১৯৯৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমির শাস্ত্রীয় সংগীত বিভাগের ওস্তাদ বরুন কুমার দত্তের নিকট প্রথম সংগীতের তালিম গ্রহণ শুরু করেন। পরবর্তীকালে ওস্তাদ আফতাব হোসেন খান বাকা ও ফরিদা ইয়াসমিন মায়া আপার সান্নিধ্যে নজরুল সংগীতে তালিম গ্রহণ করেন। তারপর দীর্ঘ ১৫ বছর সুনীল কুমার চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে উচ্চাঙ্গ সংগীতে প্রশিক্ষণ নেন।
সংগীতের পাশাপাশি কবিতা লেখার প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। তিনি দেশের গান, ভাষার গান, আধুনিক গান, রাগপ্রধান বাংলা গান এবং ছড়া গান লিখেছেন। তার বন্ধুমহলে ছোটবেলা থেকেই তাকে কবিয়াল উপাধীতে ডাকা হত। ২০০৩ সালে নূপুর সংগীত একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে সংগীত শিক্ষা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে তিনি ক্ল্যাসিক মিউজিক্যাল ইন্সটিটিউট এবং ২০১২ সালে শ্রুতি সংগীত বিদ্যা নিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে “অগ্নিবীণা” প্রকাশনী কর্তৃক তার কথা ও সুরে “জোছনা রাতে স্বপ্নলোকে” নামে একটি আধুনিক গানের সিডি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষার জন্য “ছোটদের হাতেখড়ি- ‘রাগরস’” নামে একটি বইও প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া, “রাগ সঞ্চালন” নামে একটি শাস্ত্রীয় সংগীত বই প্রকাশের কাজ প্রায় শেষ। বর্তমানে “রাগরস মানিকগঞ্জ” নামে তার বাসভবনে সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।
এভাবে, সাইফুর সেলিম দেশের সংগীতাঙ্গনে অসাধারণ অবদান রেখে চলেছেন এবং তার শিক্ষায় সংগীতের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।