লাইসেন্সবিহীন গাড়ির দাপটে যানজট

মানিকগঞ্জ শহরের যানজট সমস্যা প্রতিদিনই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। শহরের বাজার ব্রিজ মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মাত্র আড়াই কিলোমিটারের রাস্তা পাড়ি দিতে এখন সময় লাগছে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। অথচ এই পথ অতিক্রমে স্বাভাবিক সময় সাত থেকে নয় মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শহরবাসীসহ প্রতিদিন শহরে আগত সাধারণ মানুষকে।

যানজটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে শহরের সড়কে অনিবন্ধিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ফুটপাত দখল করে বসানো ভ্রাম্যমাণ দোকান এবং মার্কেটের পার্কিং স্পেসে অবৈধভাবে দোকান ভাড়া দেওয়া। পৌরসভার নিবন্ধিত অটোরিকশার চেয়ে প্রায় তিনগুন অনিবন্ধিত যানবাহন চলে শহরের বিভিন্ন সড়কে।

শহরের প্রধান সড়ক শহিদ রফিক সড়ক, গঙ্গাধরপট্টি সড়ক, গার্লস স্কুল সড়ক, বেউথা মোড়, পোড়রা খামারবাড়ি, খালপাড় ব্রিজ ও স্বর্ণকারপট্টি এলাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তীব্র যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শুরুর সময় যানজট আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যকর কোনো সমাধান হয়নি। মো. শাহজাহান নামের এক কর্মকর্তা বলেন, আগে যেখানে ১০ মিনিটে অফিসে পৌঁছাতাম, এখন লাগে ২০ মিনিট। প্রতিদিন দেরি হচ্ছে। সময়মতো বের হলেও যানজটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সোহানা রহমান নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলে যেতে ও ফেরার পথে প্রচণ্ড গরমে অটোরিকশায় বসে থাকতে হয়। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।

মোহাম্মদ হামিদুর নামে এক অটোরিকশাচালক অভিযোগ করে বলেন, আমার অটোরিকশার পৌরসভার লাইসেন্স নিয়েও ঠিকমতো আয় করতে পারছি না। লাইসেন্স ছাড়া অটোরিকশা বেশি হওয়ায় যাত্রী পাচ্ছি না। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

শহরের আবুল কাশেম নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, মার্কেটের পার্কিং স্পেসে দোকান ভাড়া দেওয়ায় গাড়ি রাস্তায় দাঁড় করাতে হয়। এতে যানজট তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত পার্কিং স্পেস ঠিক রাখা বাধ্যতামূলক করা।

নারী অভিভাবক আয়েশা আক্তার বলেন, ছেলেকে স্কুলে পৌঁছাতে গিয়ে অটোরিকশায় প্রায় ২০ মিনিট লেগে যায়। গরমে বাচ্চারা কষ্ট পায়। অথচ মাত্র ১০ মিনিটের পথ।

ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্রেতারা আসতে চায় না, কারণ গাড়ি পার্ক করার জায়গা নেই। যানজটের কারণে কেউ গাড়ি নিয়ে শহরে ঢুকতে চায় না। এতে আমাদের বিক্রিও কমে গেছে।

চালক নজরুল বলেন, জায়গায় জায়গায় অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকে, যাত্রী তো পাই না—ঘণ্টায় এক দুইটা ট্রিপ হয়, আগে যেখানে চার-পাঁচটা ট্রিপ দিতাম। অনিবন্ধিত গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে লাইসেন্সধারী চালকদের বাঁচা মুশকিল।

পথচারী বৃদ্ধ মাজের মোল্লা বলেন, পায়ে হেঁটে চলার সুযোগ নাই। ভ্যানে দোকান বসে যায়, রাস্তায় গাড়ি দাঁড়ানো—শুধু ধাক্কাধাক্কি করে চলতে হয়। এসব কি পৌরসভার চোখে পড়ে না?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পথচারী বলেন, বাজার ব্রিজ থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে। প্রশাসন চাইলে এসব সরিয়ে ফেলে কয়েকদিনেই যানজট কমাতে পারে। কিন্তু প্রশাসন কোন স্বার্থে নীরব তা আমার জানা নেই।

জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক সুরুজ খান বলেন, অনিবন্ধিত অটোরিকশা অপসারণের পাশাপাশি ভবনগুলোর পার্কিং ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে কার্যকর করতে হবে। প্রয়োজনে পিক আওয়ারে ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। আর সেই সাথে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করা উচিৎ।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক সানজিদা জেসমীন বলেন, ‘যানজট নিরসনে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভবন মালিকদের নোটিশ দিয়ে পার্কিং স্পেস পুন:নির্ধারনের কাজ চলছে। অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান সরাতে নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে এই সমস্যা সমাধানে জনগণ, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

নিউজটি শেয়ার করুন
Scroll to Top