মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ওসিকে ফাঁসানোর চেষ্টা

মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরকে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অসাধারণ মানুষের প্রত্যাশিত সমাজ গড়তে প্রতিটি এলাকায় গিয়ে মানুষের সাথে মতবিনিময় সহ মাদক, জুয়া, ইভটিজিং, দখল, চাঁদাবাজি বন্ধের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে তার বিরুদ্ধে একটি মহল মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে বলে দাবী করেছেন ভুক্তভোগী পুলিশ কর্মকর্তা।

জানা গেছে, ১২ জানুয়ারি সিংগাইরের চর আজিমপুর গ্রামের কাজী গোলাম হোসেনের ছেলে কাজী আরিফুর রহমান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ছোট ভাই কাজী শরিফুর রহমান ৯ বছর আগে চাঁদনী আক্তারকে বিয়ে করেন, তাদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। সম্প্রতি, চাঁদনী তার স্বামীর ৮ ভরি স্বর্ণ, ৪৫ হাজার সৌদি রিয়াল ও দুটি স্মার্টফোন নিয়ে পালিয়ে যান। সিংগাইর থানায় অভিযোগ দায়েরের পরও, ওসি তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা না নিয়ে চাঁদনীকে ছেড়ে দেন এবং মিথ্যা মামলার হুমকি দেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, ৫ জানুয়ারি চাঁদনীর মা জহুরা খাতুন তার মেয়েকে খুন করে গুম করার অভিযোগে থানায় অভিযোগ করেন। একই দিন চাঁদনীর স্বামী কাজী শরিফুর রহমানও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বর্ণ, রিয়াল ও স্মার্টফোন নিয়ে পালানোর অভিযোগ করেন। দুই পক্ষের অভিযোগের পরেই তদন্ত শুরু হয়।

তিনি আরো জানান, গত ৯ জানুয়ারি সাভারের বিরুলিয়া এলাকা থেকে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে চাঁদনী ও তার সাথে থাকা এক যুবককে উদ্ধার করা হয়। চাঁদনীর কাছে থাকা তার ব্যক্তিগত একজোড়া কানের দুল, একটি আংটি, একজোড়া নুপুর ও একটি স্মার্ট ফোন এস আই মোতালেবের হেফাজতে থানায় আনা হয়। আমার কক্ষে দুই পক্ষের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সম্মতিতে সদ্য ডিভোর্সকৃত চাঁদনীকে তার বাবার হেফাজতে দেয়া হয় এবং স্বামীর হারানো মালামাল উদ্ধারের জন্য তাকে মামলা করার কথা বলা হয়।

তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মাদক, জুয়া, ইভটিজিং, দখল ও চাঁদাবাজি বন্ধে তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এসময় একটি কুচক্রিমহল তার কাজ বন্ধ করার জন্য কাজী আরিফুর রহমানকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষ তদন্ত করছে এবং যদি তিনি দোষী হন, তবে তাকে নেয়া ব্যবস্থা সাদরে গ্রহণ করবেন।

অভিযোগের বাদী কাজী আরিফুর রহমান জানান, যখন মেয়েকে থানায় নিয়ে আসা হয়, তখন তারা কোনো কিছু দেখায়নি। পরবর্তীতে মোতালেব দারোগা তাদেরকে কানের দুল, আংটি, নুপুর, ১৬ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে তাদের দাবি, ৮ ভরি স্বর্ণ ও ৪৫ হাজার রিয়েল দেয়া হয়নি। প্রথমবার থানায় তদন্ত ওসি মোশাররফ হোসেন চাঁদনীকে গুম করা হয়েছে বলে আমাদের হুমকি দেয়। কিন্তু অভিযোগে ভুলক্রমে তদন্ত ওসির পরিবর্তে ওসির নাম লেখা হয়েছে। তবে, দ্বিতীয়বার ওসি আমাদের মামলা নিতে চায়নি। তবে তিনি কোন ভয়ভীতি দেখাননি বা আমাদের সামনে রিয়েল বা কোন টাকা পয়সা ,স্বর্ণালংকার চাঁদনী দেয়নি।

এব্যাপারে চাঁদনী বলেন, তার স্বামী বিদেশে থাকার কারণে যোগাযোগ ও খরচপাতি দিতেন না। যার ফলে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। ঝগড়ার কারণে তিনি বাসা থেকে চলে যান। যাওয়ার সময় সে কোন স্বর্ণালংকার বা রিয়াল নেয়নি। এসআই মোতালেব তাকে থানায় নিয়ে আসার পর, তার কাছ থেকে কানের দুল, আংটি, নুপুর, ১৬ হাজার ৩শ টাকা ও একটি মোবাইল সেট হেফাজতে নেয়। থানায় ফিরে আসার পর সব কিছু ফেরত দেয়া হয়েছিল। আমার সাবেক স্বামী ও তার স্বজনরা মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। আমি তাদের কোন স্বর্ণ ও টাকা পয়সা নেইনি। তারা পুলিশের বিরুদ্ধেও মিথ্যা অভিযোগ করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সিংগাইর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও পৌর বিএনপির প্রচার সম্পাদক নুর আলম বাবুল বলেন, চাঁদনীকে থানায় আনার পর ওসির রুমে তিনিসহ দুইপক্ষের গণমাণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তাদের সম্মুখেই চাঁদনীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একজোড়া কানের দুল, একটি আংটি, একজোড়া নুপুর, নগদ ১৬ হাজার ৩শ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন আমরা দেখতে পাই।
অভিযোগকারীর স্বজন আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মো. রিয়াজুল ইসলাম জানান, থানায় ওসি সাহেবের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের মুরব্বিরা সিদ্ধান্ত নেন যে, চাদনী তার স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার কারণে তাকে তার বাবার হেফাজতে দেওয়া হবে এবং স্বামীর দাবীকৃত স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করতে চাইলে থানায় মামলা করা যাবে। তিনি জানান, তাকে স্বামীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল এবং ওসি সাহেবের কোনো সম্পৃক্ততা তিনি সেখানে দেখেননি, এমনকি কোনো পক্ষকেই ভয়ভীতি প্রদর্শন করেননি।

চাঁদনীর সাবেক স্বামী কাজী শরিফুর রহমান বলেন, ওসি সাহেব আমাদের কোন হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাননি। তবে তিনি কি কারণে চাঁদনীকে ছেড়ে দিল সেটি আমরা বুজতে পারিনি। মামলার বাদী তার অভিযোগে ওসি ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করেছে এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সে ব্যাপারে বাদীই ভাল বলতে পারবেন।

সিংগাইর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ি আতাউল হক, সিংগাইর ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাওলানা আশরাফ উদ্দিন ও থানা মসজিদের ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান জানান, বিগত সময়ে সিংগাইর থানায় যে সকল ওসি দায়িত্ব পালন করেছেন, বর্তমান ওসি তাদের চাইতে অনেক ভাল কাজ করছেন। তিনি মাদক, চাঁদাবাজি, দখল ও ইভটিজিং বন্ধে জোড়ালো ভূমিকা পালন করছেন। হয়তো তার এমন কাজের কারণে কোন একটি মহল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে।

এব্যাপারে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোসা: ইয়াছমিন খাতুন জানান, এ ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

সবখবর/ নিউজ ডেস্ক

নিউজটি শেয়ার করুন
Scroll to Top