আশরাফ লিটন
সাংবাদিকতা—একটি মহান পেশা। সত্যের খোঁজে নির্ভীক পদচারণা, সমাজের আয়নায় বাস্তবতার প্রতিফলন, আর গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। অথচ, আমাদের দেশের মফস্বল অঞ্চলে এই পেশাটি আজ গভীর সংকটের মুখোমুখি। গৌরবের যে পেশা একদিন সমাজ বদলের হাতিয়ার ছিল, তা আজ অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে উঠেছে সুবিধাবাদ ও অপেশাদারিত্বের আশ্রয়স্থল।
আজকাল দেখা যাচ্ছে, মফস্বলের সংবাদমাধ্যমে এমন অনেক ব্যক্তি যুক্ত হচ্ছেন, যাঁদের নেই যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা সাংবাদিকতার প্রাথমিক নীতিমালার জ্ঞান। অনেকে তো আবার নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ‘সাংবাদিক’ পরিচয়টিকে ব্যবহার করছেন ভয়ভীতি প্রদর্শন, চাঁদাবাজি কিংবা রাজনৈতিক দালালি করার কাজে। এককালে যেখানে সাংবাদিকতা ছিল দায়িত্ব ও নিষ্ঠার প্রতীক, সেখানে আজ অনেক জায়গায় তা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুবিধার মোড়কে মোড়ানো এক পরিচয়পত্র মাত্র।
এই অপেশাদার ও অবাঞ্ছিত প্রবেশ সাংবাদিকতার বিশ্বাসযোগ্যতা যেমন নষ্ট করছে, তেমনি সাধারণ মানুষের তথ্য জানার অধিকারও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। যাচাই-বাছাইহীন সংবাদ, গুজবনির্ভর রিপোর্ট এবং পক্ষপাতদুষ্ট লেখা শুধু সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায় না—এটি সমাজের মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রকেও দুর্বল করে তোলে।
তবে আশার কথা হলো, এখনো অনেক নিষ্ঠাবান ও সাহসী মফস্বল সাংবাদিক আছেন, যারা সীমিত সুযোগ, আর্থিক অনিশ্চয়তা ও প্রভাবশালীদের চাপের মধ্যেও সত্যের পক্ষে দাঁড়ান। তাদের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি, প্রশিক্ষণ, আর একটি সুরক্ষিত কাজের পরিবেশ।
সমস্যা নিরসনে যা যা জরুরি:
সাংবাদিকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা চালু করা, বিশেষ করে মফস্বলে;
পেশাগত মানদণ্ড ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া কঠোর করা—যাতে কেউ ইচ্ছামতো এই পেশায় ঢুকে পেশাটিকে কলুষিত করতে না পারে;
প্রেস ক্লাবগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা;
পেশাদার স্থানীয় সাংবাদিকদের জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা।
আমরা চাই, মফস্বলের সাংবাদিকতাও হোক শহরের সমমানের পেশাগত ও নৈতিকতায় ঋদ্ধ। সত্য বলার সাহস, দায়িত্বশীলতা আর নিরপেক্ষতার যে ঐতিহ্য বাংলাদেশের সাংবাদিকতা বহন করে—তা যেন নবউদ্যমে ফিরে আসে প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি সংবাদ কক্ষে।
লেখক: সম্পাদক, সবখবর