নিজস্ব প্রতিবেদক, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ১ ও ২ নম্বর ঘাট এখন কার্যত দখলে নিয়েছে প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা। সরকারি এই গুরুত্বপূর্ণ ঘাট এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল আকৃতির বালুর স্তূপ। ফেরিঘাটের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ায় প্রতিদিন যানজট ও বিশৃঙ্খলার মুখে পড়ছে শত শত যানবাহন এবং যাত্রী। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দেশনা উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এই অবৈধ বালু ব্যবসা।
জানা গেছে, ২০০২ সালে আরিচা থেকে ফেরিঘাট স্থানান্তর করে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় আনা হয়। যানবাহনের চাপ সামাল দিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় পাঁচটি ঘাট। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই ১ ও ২ নম্বর ঘাটের একটি বড় অংশ চলে যায় স্থানীয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের দখলে। বর্তমানে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন আরিফ কাজী, বিল্টু, রাসেল, সুজনসহ আরও কয়েকজন।
বিআইডব্লিউটিএ’র মানিকগঞ্জ নদী ও বন্দর কর্মকর্তা সেলিম শেখ বলেন: “আমরা নিয়মিতভাবে বালু ব্যবসায়ীদের ঘাট এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দিয়ে আসছি। মাইকিং করেছি, মৌখিক ও লিখিতভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তারা নির্দেশনা মানছেন না। ঘাটের জায়গায় বড় বড় বালুর স্তূপ করে রাখার ফলে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রী এবং চালকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। সরকারি জায়গা এভাবে দখল করে রাখা সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা চাই ঘাট এলাকায় স্বাভাবিকতা ফিরে আসুক।”
তিনি আরও জানান, বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও স্থানীয়ভাবে কোনো স্থায়ী সমাধান আসছে না। কিছু জায়গা ব্যক্তিমালিকা দাবী করলেও সেটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
পাটুরিয়ার বালু ব্যবসায়ী কাজী আরিফুর রহমান বলেন: “আমরা নিজেদের মালিকানাধীন জমির ওপরেই বালুর স্তূপ করে রেখেছি। ফেরিঘাটের সরকারি জায়গা দখলের অভিযোগ ঠিক নয়। বিআইডব্লিউটিএ যেটাকে ঘাট এলাকা বলছে, সেটির মালিকানা নিয়ে এখনো পরিষ্কার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা কেউ সরকারের জমি জোর করে দখল করিনি, বরং নিজেদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করে আসছি।”
শিবালয় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন: “ফেরিঘাট এলাকায় যদি সরকারি জায়গা দখল করে বালু ব্যবসা পরিচালিত হয়, তাহলে সেটি অবশ্যই আইনগত অপরাধ। বিআইডব্লিউটিএ যদি আমাদের কাছে লিখিতভাবে এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়, তাহলে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। প্রশাসন সবসময়ই অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, ভবিষ্যতেও সেই নীতি অনুসরণ করা হবে।”
সম্প্রতি ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি ফেরিঘাট থেকে অবিলম্বে বালুর স্তূপ অপসারণ করার নির্দেশ দেন। তার উপস্থিতিতে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের নতুন করে সতর্ক করেন এবং সময় বেঁধে দেন এলাকা খালি করার জন্য।
ঘাট এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন: ঘাট এলাকায় বালু ব্যবসার কারণে প্রতিদিনই ধুলোবালিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে যাত্রী, যানবাহন চালক ও স্থানীয়দের। ঘাট থেকে বালু ব্যবসা অপসারণের দাবী তাদের।
অন্য এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন: “সরকার কোটি টাকা ব্যয়ে ঘাট বানিয়েছে, কিন্তু এখন সেই ঘাটে ব্যবসায়ীরা রাজত্ব করছে। কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। আমরা চাই, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিক।”