নেতৃত্বের নামে চাটুকারিতা: বিপাকে স্থানীয় সাংবাদিকরা

আশরাফ লিটন

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকতা একটি নতুন ধরনের সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। বিশেষ করে জেলা-উপজেলায় গঠিত প্রেসক্লাবগুলোর নেতৃত্বে থাকা কিছু সাংবাদিক নেতা পেশাগত দায়িত্ব ও নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের তেলবাজি এবং চাটুকারিতায় মেতে উঠেছেন। এর ফলে প্রকৃত সাংবাদিকদের কাজ করা যেমন কঠিন হয়ে উঠছে, তেমনি সাংবাদিকতার পেশাগত মর্যাদাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

মাঠে-ঘাটে ছুটে সংবাদ সংগ্রহকারী প্রকৃত সাংবাদিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সত্য তুলে ধরার জন্য। অথচ প্রেসক্লাবের নামধারী কিছু নেতা, যারা মাঠে নামেন না, তারাই প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে নিজেদের সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত থাকেন। তারা বিভিন্ন সামাজিক বা প্রেসক্লাব কেন্দ্রিক আয়োজনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অতি প্রশংসা করে, সংবাদ প্রকাশের নামে তাদের অতিরিক্ত প্রচার দেয়। এতে একদিকে যেমন প্রশাসনের সঙ্গে এক ধরনের ঘনিষ্ঠ ও পক্ষপাতমূলক সম্পর্ক তৈরি হয়, অন্যদিকে স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হয়।

অনেক সময় দেখা যায়, প্রকৃত সাংবাদিক যখন প্রশাসনের ভুল বা দায়িত্বে গাফিলতির প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, তখন তাদেরকে নানা রকম চাপের মুখে পড়তে হয়। কারণ, প্রেসক্লাব নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে সখ্য বজায় রাখতে গিয়ে সেই সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াতে চান না। বরং উল্টোভাবে মাঠের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এতে সাংবাদিক সমাজে বিভক্তি তৈরি হয়, যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে।

এই পরিস্থিতি শুধু সাংবাদিকদের জন্যই নয়, জনগণের জন্যও ক্ষতিকর। কারণ গণমাধ্যমের একটি বড় দায়িত্ব হলো প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষমতাবানদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। যদি সাংবাদিক নেতারা চাটুকারিতায় ব্যস্ত থাকেন, তাহলে সেই দায়িত্ব আর সঠিকভাবে পালন সম্ভব হয় না।

তাই এখন সময় এসেছে এই তেলবাজি ও সুবিধাবাদী সাংবাদিকতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার। প্রয়োজন গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে ঐক্য এবং নৈতিকতার প্রতি দায়বদ্ধ নেতৃত্ব। প্রেসক্লাবগুলোতে সত্যিকারের মাঠপর্যায়ের, নীতিবান সাংবাদিকদের নেতৃত্বে আনা না গেলে ভবিষ্যতে সাংবাদিকতা পেশা আরও বেশি সংকটে পড়বে।

লেখক: সম্পাদক, সবখবর

নিউজটি শেয়ার করুন
Scroll to Top