নিষিদ্ধ কীটনাশকে কৃষি ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে মানিকগঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের শহীদ রফিক সড়কে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বারসিক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ)।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জেলার সদর, ঘিওর, হরিরামপুর ও সিংগাইর উপজেলার ২১ জন কৃষকের ওপর মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, সরকারিভাবে নিষিদ্ধ চারটি কীটনাশক—কার্বোফুরান, প্যারাকোয়াট, গ্লাইফোসেট ও অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড—এখনো বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এবং কৃষকেরা তা ব্যবহারও করছেন।

এসব কীটনাশকের ব্যবহারে কৃষকেরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। কারও মাথাব্যথা, বমিভাব, দুর্বলতা, ডায়রিয়া, বিষণ্নতা, বিভ্রান্তি, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা গেছে। এসব সমস্যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে সাময়িকভাবে উপশম হলেও দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

এ ছাড়া বিষাক্ত কীটনাশকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জমির ফসল, গবাদিপশু ও মাছ। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২১ জন কৃষকের মধ্যে ১৮ জন নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের জমির উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমেছে। এতে কৃষকের আনুমানিক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা।

এছাড়া দেখা গেছে, এক মৌসুমে কীটনাশক বাবদ কৃষকদের সম্ভাব্য ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ২৬ হাজার ৭০০ টাকা। এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে ১০টি গরু, ১১টি হাঁস ও একটি পুকুরের মাছ মারা যাওয়ার ঘটনাও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বারসিক এর প্রকল্প কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায়।

এ সময় বারসিক সভাপতি অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, গবেষণা সহকারী গাজী নাফিউর রহমান হিমেল, কর্মসূচি সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বারসিক-এর কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকদের অসচেতনতা, বাজারে অবাধ বিক্রি, কীটনাশক ব্যবহারের নিয়ম না জানা, যথাযথ তদারকির অভাব—সবকিছু মিলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা এই সমস্যা সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, বিশেষ করে কৃষি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ কামনা করেন।

এছাড়া পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ, অর্গানিক কৃষি এবং কৃষি-প্রতিবেশ চর্চা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেন বক্তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন
Scroll to Top