কামরুল হাসান খান : মানিকগঞ্জ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ডায়াবেটিক হাসপাতালের পরিচালক ডা: হাসান মাহমুদ হাদীর বিরুদ্ধে দূর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার তার দূর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের ২৯ জন চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ডা: হাসান মাহমুদ হাদী দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণ কওে আসছেন। সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক হাসপাতাল ও জরুরী সেবা চালু রাখার নির্দেশ থাকলেও তিনি গত ১০ অক্টোবর দূর্গা পূজায় বিশেষ ছুটি ঘোষণা করেন। ওই দিন তিনি সরকারী বিধি নিষেধ উপেক্ষা কওে হাসপাতালের বহি:বিভাগ ও সকল প্রকার প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। গত ৬ অক্টোবর হাসপাতালের হিসাব রক্ষকের কাছে নিয়ম বহির্ভূত টাকা চেয়ে না পেয়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে টেবিলের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেন। সেই সাথে তাকে শোকজসহ চাকরি থেকে অব্যাহতির দেয়ার হুমকি প্রদান করেন। হাসপাতালে নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিনি ডা: নুসরাত ইয়াসমিনকে নিয়োগ প্রদান করেন। তিনি ওটি বিভাগের অর্থ আত্নসাত করেছেন। তিনি বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিনিধিদের হাসপাতালে অবাদে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন। এতে করে বহি: বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। হাদী ও তার স্ত্রী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজনীন দুজনেই হাসপাতালের শীর্ষ পদে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি কোন প্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: সানজিদা আক্তারের রোগী দেখার কক্ষ তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়।
অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, এসব অভিযোগ ছাড়াও ডা: হাদীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ যার ভিডিও ও স্থির চিত্র তাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: সানজিদা বলেন, অফিসে নিয়মবহির্ভূত কাজ না করার কারণে পরিচালক ডা: হাদী ও তার স্ত্রী প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার সম্প্রতি তার কক্ষে অন্যায়ভাবে তালা দিয়ে দেন। রোগীদের সামনে একজন চিকিৎসকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না।
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক জুয়েল রানা বলেন, ডা: হাদী ও তার স্ত্রী হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। প্রতিবাদ করলেই তিনি চাকরি খেয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করেন। হাসপাতালের ডিউটির বাইরেও তিনি কাজ করান যা কিনা নিয়মের বাইরে। শুধু তাই নয় হাসপাতালের কর্মচারীদের দিয়ে তিনি তার বাসার কাজও করান।
হিসাবরক্ষক মো: সোহেল রানা, ৬ অক্টোবর সকালে ডা: হাদী ও তার স্ত্রী দুজনে মিলে ক্যাশ থেকে ৫৬ হাজার নগদ টাকা দিতে বলেন যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। নগদ টাকা না দেয়ায় ডা: হাদী উত্তেজিত হয়ে আমাকে গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে তিনি আমার টেবিলের গ্লাস ভেঙে ফেলেন। আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতির হুমকি দেয়া হয়। ওনার মতের বিরুদ্ধে গেলেই তিনি সবার সাথেই এমন খারাপ আচরণ করেন।
ওয়ার্ড মাস্টার মির্জা নুরে আলম রাসেল বলেন, পরিচালক ডা: হাদী ল্যাব ইনচার্জ হানিফের সহযোগিতায় রোগীদের রিপোর্ট বিলম্ব করে দেয়। দুইটার পরে ডাক্তারদের ডিউটি শেষ হয়ে গেলে ওই রোগীদের প্রেসক্রিপশন ডা: হাদী করেন। এতে করে তিনি তার পছন্দের কোম্পানির ওষুধ লিখে মাসে ৮/১০ লাখ টাকার কমিশন বাণিজ্য করে।
তিনি আরো বলেন, আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা চাই তিনি একটি সুষ্ঠু তদন্ত করে ডা: হাদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত পরিচালক ডা: হাদী বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।
জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, সম্প্রতি হাসপাতালের পূর্বের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সবখবর/ নিউজ ডেস্ক