জামালপুরের ঐহিত্যবাহী মিল্লি

জামালপুরের ঐহিত্যবাহী মিল্লি

জামালপুরের ঐহিত্যবাহী মিল্লি, এই খাবারটি জামালপুর জেলার সুস্বাদু এবং প্রাচীন ঐতিহ্য। অনেকেই জানেন না, মিল্লি কী, তবে যারা জানেন, তাদের কাছে এটি এক বিশেষ খাবার। মিল্লি হল জামালপুরের শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী খাবার যা মাংস, চালের গুঁড়া, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরাসহ নানা প্রকার মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। জামালপুরের মিল্লি খাবারের স্বাদ এমন, যে একবার খেলেই মন জুড়িয়ে যায় এবং তার স্বাদ মনে দাগ কেটে যায়।

এটি সাধারণত প্রতিদিনের খাবার নয়, বিশেষ কোনো উপলক্ষে যেমন, কারও মৃত্যু, বা বড় কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে এটি তৈরি করা হয়। অনেকে এই খাবারটিকে ম্যান্দা, মিলানি বা পিঠালি নামেও ডাকে। যেই নামেই ডাকুক, জামালপুরবাসীর প্রিয় খাবার একটাই—মিল্লি। খেয়েই বুঝতে পারবেন, কেন জামালপুরের ঐহিত্যবাহী মিল্লি নাম শুনলেই জিবে পানি চলে আসে।

বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো জামালপুরের মানুষও সাধারণত ভাত, মাছ, ডাল, সবজি খেতে অভ্যস্ত। তবে যখন মিল্লি রান্না হয়, তখন পুরো পরিবেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। বড় কোনো উপলক্ষে এটি রান্না হলেও, এই অঞ্চলে সব শ্রেণির মানুষই মিল্লি খেতে পছন্দ করেন। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত পরিবারেও মিল্লির প্রচলন রয়েছে, যা জামালপুরের ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।এটা ঠিক কখন থেকে শুরু হয়েছে তা নির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও, ধারণা করা হয়, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে জামালপুরবাসী এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

আরো পড়ুন: যে গ্রামে মাত্র দুইজন মানুষ

বিশেষ করে স্বাধীনতা পূর্বকালে নাকি বিভিন্ন বিচার-সালিস বৈঠক এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে মিল্লি পরিবেশন করা হতো। যদিও সেই সময়কার ধারাবাহিকতা এখন কিছুটা কমেছে, তবুও আজও জামালপুরের ঐহিত্যবাহী মিল্লির প্রচলন অব্যাহত রয়েছে।

মিল্লি দেখতে হালিমের মতো হলেও খেতে এর স্বাদ পুরোপুরি আলাদা, এবং অনেক বেশি সুস্বাদু। জামালপুরে যখন কোনো মৃত্যু হয়, তখন তার ৪০ দিনের দোয়ার আয়োজন করা হয়, যা স্থানীয় ভাষায় ‘বেপার’ নামে পরিচিত। এই বেপারে সব শ্রেণির মানুষ একসঙ্গে কলাপাতায় ভাতের সঙ্গে গরম গরম মিল্লি খায়। এটি জামালপুরের বৈশিষ্ট্য।

এছাড়া, জামালপুরের মুসলমানরা নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেমন, বিয়ে, আকিকা, খতনা ইত্যাদি মিল্লির আয়োজন করে থাকে। জামালপুরবাসী নিজেদের বাড়িতেও মিল্লি রান্না করতে ও খেতে ভালোবাসে।

মিল্লি তৈরির সময় যে বিশেষ উপকরণগুলি ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে চালের গুঁড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি খাবারটির স্বাদ ঘন করে এবং এক ভিন্ন ধরনের স্বাদ প্রদান করে। বিশেষভাবে, মিল্লি প্রায় তৈরি হয়ে গেলে, রসুন, পেঁয়াজ ও জিরা দিয়ে যে বাগাড় দেওয়া হয়, তাতেই শেষ হয় খাবারের স্বাদ। এই বাগাড়ে মিল্লির আসল স্বাদ প্রকাশ পায়।

জামালপুরের ঐহিত্যবাহী মিল্লি আজও এ অঞ্চলের মানুষের কাছে এক অমূল্য রত্ন হয়ে রয়েছে।

সবখবর/ নিউজ ডেস্ক

নিউজটি শেয়ার করুন
Scroll to Top