আত্মহননের ভাবনা থেকে বিশ্ব দরবারে রিকতা

আত্মহননের ভাবনা থেকে বিশ্ব দরবারে রিকতা

কুড়িগ্রামের চিলমারি উপজেলার বাসিন্দা রিকতা আখতার বানু একসময় তার প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে আত্মহননের চিন্তা করেছিলেন। তবে আজ তিনি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের গৌরব।

২০২৪ সালে বিবিসির ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পেয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, কঠিন সংগ্রাম এবং ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সব কিছু জয় করা সম্ভব।

তার এই অর্জন শুধু তার নয়, বরং পুরো দেশের, বিশেষত মা-বোনদের অর্জন। তিনি বলেন, “এ অর্জন আমাদের সবার। এটি দেশের অর্জন। এটি মা-বোনদের অর্জন।”

রিকতার জীবনে এক সময় এমন একটি সময় ছিল, যখন তিনি হতাশার গভীরে চলে গিয়েছিলেন। তার মেয়ে অটিজম এবং সেরিব্রাল পালসির আক্রান্ত হলে, তিনি নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন। স্থানীয় বিদ্যালয়ে মেয়ে ভর্তি করার পর সহপাঠী ও শিক্ষকদের অবহেলায় তিনি একসময় আত্মহননের চিন্তা করেছিলেন।

কিন্তু সে রাতে, দুঃখের মাঝে, তিনি নতুন একটি পথ চিন্তা করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন, যেখানে তার মেয়ে এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিশুরা পড়াশোনা করতে পারবে।

রিকতা তার স্বামী মো. আবু তারিক আলমের সাথে আলোচনা করে, বাড়ির পাশের জমিতে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করেন। ২০০৯ সালে ৭৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় “লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি স্কুল”, যা আজ ২৯৪ জন শিক্ষার্থী এবং ২০ জন শিক্ষকসহ এক গর্বিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

আরো পড়ুন: জামালপুরের ঐহিত্যবাহী মিল্লি

এখানে শিশুদের শুধু পড়াশোনা নয়, সেলাই, গান, খেলাধুলা এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর রিকতা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সহযোগিতা পেয়েছেন। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, এসপি, ডিসি—সবাই তাকে সহায়তা করেছেন এবং সাহস দিয়েছেন।

রিকতা জানান, “স্কুল শুরু করার পর স্থানীয় মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়েছে। তাদের সাহস জুগিয়ে আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি।” ২০২০ সালে স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়, যার ফলে শিক্ষকদের বেতন প্রদান করা শুরু হয়। তবে, স্কুলটির সামনে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

আরো পড়ুন: নিজামের মিষ্টি

রিকতা বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা, খাবার, সীমনা প্রাচীর এবং যানবাহন প্রয়োজন। খেলার সামগ্রী এবং অন্যান্য উপকরণ সঠিকভাবে ব্যবস্থা করা গেলে, স্কুলটি আরো উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে।”

আজ রিকতা আখতার বানু শুধু চিলমারি উপজেলার নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের গর্ব। তার সংগ্রাম এবং স্কুল প্রতিষ্ঠার সাফল্য শুধু তার অর্জন নয়, এটি দেশের প্রতিটি মানুষের অর্জন। তার জীবনগাথা প্রমাণ করে, শক্ত মনোবল এবং সহযোগিতার মাধ্যমে যে কোন প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব।

সবখবর/ নিউজ ডেস্ক

নিউজটি শেয়ার করুন
Scroll to Top