অলস ব্যক্তিরা নিজ এবং সমাজের বোঝা

আশরাফ লিটন

একটি সমাজ যতই সম্পদশালী হোক না কেন, যদি সেই সমাজে কাজ না করা, দায় এড়িয়ে যাওয়া এবং অলসতার প্রতি উদাসীনতা জন্ম নেয়, তাহলে সে সমাজ এগোতে পারে না। অলসতা মানে কেবল শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা নয়, বরং মানসিক জড়তাও এর অংশ। একজন অলস ব্যক্তি নিজের জীবনে যেমন অগ্রগতি ঘটাতে পারেন না, তেমনি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য হয়ে ওঠেন একটি অব্যবস্থাপনার নামান্তর একটি বোঝা।

প্রথমেই দেখা যাক ব্যক্তিগত ক্ষতির দিকটি। অলসতা একজন মানুষের চিন্তার সৃজনশীলতা হরণ করে, আত্মবিশ্বাস দুর্বল করে এবং তাকে ক্রমাগত পরনির্ভরশীল করে তোলে। নিজের প্রয়োজন পূরণে যে শ্রম ও উদ্যোগ দরকার, তা না থাকলে সে ব্যক্তি নিজেই নিজের জীবনে অকার্যকর হয়ে ওঠে। অলস ব্যক্তি কাজের প্রতি আগ্রহহীন থাকে, ফলে তার দক্ষতা তৈরি হয় না। আত্মসম্মানবোধ ক্ষীণ হয়ে যায়, যা তাকে হতাশা ও আত্মবঞ্চনার পথে ঠেলে দেয়।

কিন্তু ক্ষতি এখানেই শেষ নয়, সমাজেও এর প্রতিফলন পড়ে। অলসতা শুধু একটি ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়, এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। সমাজে যখন কর্মক্ষম মানুষ অলসভাবে দিন কাটায়, তখন সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা কমে যায়। পরিবারে সে হয় ভরসাহীন, রাষ্ট্রে হয় বোঝা। কর দিতে চায় না, কিন্তু রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে চায়। নৈতিকভাবে অলস ব্যক্তি দায়িত্ব নিতে চায় না, অথচ সব কিছুর সুবিধাভোগী হতে চায়, এমন অসঙ্গতি কোনো সুস্থ সমাজ মেনে নিতে পারে না।

অলসতা কখনো কখনো বুদ্ধিমান হয়ে থাকার মুখোশ পরে আসে। কেউ কেউ যুক্তি দেন, সব কাজ করবো কেন? কিংবা সময়মতো সব হবে, কিন্তু এর অন্তরে থাকে দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা। আমাদের সমাজে বহু সম্ভাবনাময় তরুণ আছেন, যারা অলসতায় জীবন নষ্ট করছেন। তারা সময়ের গুরুত্ব বোঝেন না, সুযোগ চিনতে শেখেননি। অথচ তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তারা অলস হলে রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল হয়।

এই প্রেক্ষাপটে জরুরি একটি প্রশ্ন হলো—সমাধান কোথায়? প্রথমত, অলসতা শুধুই কাজ না করার প্রবণতা নয়, এটি একটি মানসিক অভ্যাস। তাই পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, সময়ানুবর্তিতা ও পরিশ্রমের মূল্য শেখানো জরুরি। দ্বিতীয়ত, সমাজে অলসতাকে হালকা করে দেখার প্রবণতা আছে তা বদলাতে হবে। অলসতা যেন সামাজিকভাবে লজ্জার বিষয় হয়, এমন মানসিক পরিবেশ তৈরি করা দরকার।

অলসতা নিজে নিজে কেবল একজন মানুষের ক্ষতি করে না, এটি একটি নীরব ভাইরাসের মতো গোটা সমাজকে দুর্বল করে তোলে। তাই ব্যক্তি যদি সচেতন না হয়, তবে সমাজকে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই হবে। কারণ অলস মানুষ শুধু নিজের নয়, সমগ্র জাতির বোঝা।

নিউজটি শেয়ার করুন
Scroll to Top