ঘুম শরীর ও মনকে সতেজ রাখে, ক্লান্তি দূর করে এবং পরিশ্রমের পর প্রশান্তি প্রদান করে। যখন ঘুম ঠিকমতো হয়, তখন দেহ-মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে। কিন্তু যদি ঘুমের সমস্যা থাকে, তাহলে সারাদিন ক্লান্তি অনুভূত হয় এবং মেজাজও খিটখিটে হয়ে যায়। কিছু মানুষ রাতভর বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেন এবং কয়েকবার ঘুম থেকে উঠে যান, তবে তাদের ঘুম কখনোই পূর্ণাঙ্গ হয় না। এছাড়াও, সাত-আট ঘণ্টা ঘুমানোর পরেও অনেকে মনে করেন, তাদের ঘুম ভালো হয়নি। এরকম ব্যক্তিরা নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত হতে পারেন, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
নিদ্রাহীনতার কারণ ও প্রভাব : নিদ্রাহীনতা নানা কারণে হতে পারে, যেমন ক্যান্সার, হাঁপানি, আর্থ্রাইটিস, মানসিক চাপ, অবসাদ, নানা ধরনের ওষুধ, বেডরুমের অতিরিক্ত আলো ও শব্দ ইত্যাদি। যারা স্বল্প সময়ের জন্য নিদ্রাহীনতায় ভোগেন, তাদের সমস্যা সাধারণত কিছুদিন পর মিটে যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদি নিদ্রাহীনতার ক্ষেত্রে চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর জন্য আপনার ঘুমের অভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
ঘুমের অভ্যাসে সহজ পরিবর্তন :
১. দিনে ঘুমানো এড়িয়ে চলুন: দিনের বেলা ঘুমানো যদি আপনার অভ্যাস হয়ে থাকে, তবে তা বাদ দিন। রাতে ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য এই অভ্যাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
২. চা-কফি পরিহার করুন: রাতে চা-কফি পান করা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, তাই এড়িয়ে চলুন।
৩. নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমান: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন, এমনকি ছুটির দিনেও। এর ফলে শরীরের ঘড়ি সঠিকভাবে কাজ করবে এবং ঘুমের সমস্যা কমবে।
৪. ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন: বেডরুমকে ঘুমের উপযোগী হতে হবে। অতিরিক্ত আলো বা শব্দ থাকলে তা কমানোর চেষ্টা করুন।
৫. খাবার সময়সীমা নির্ধারণ করুন: রাতের খাবার শোয়ার কমপক্ষে দুই-তিন ঘণ্টা আগে শেষ করুন এবং ডিনারে ভারী খাবার পরিহার করুন। অতিরিক্ত তরল পানে বারবার প্রস্রাবের প্রবণতা বাড়ে, যা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।
৬. ধূমপান পরিহার করুন: ঘুমানোর আগে ধূমপান এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ঘুমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৭. ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম ঘুমের গুণগত মান উন্নত করে, তবে ঘুমানোর পাঁচ-ছয় ঘণ্টা আগে ব্যায়াম শেষ করুন।
৮. ঘুম না আসলে বিছানা ছেড়ে উঠুন: যদি ঘুম না আসে, তাহলে বিছানায় শুয়ে থেকে সময় নষ্ট করবেন না। উঠে কিছু হালকা কাজ করতে পারেন, যেমন বই পড়া বা মৃদু বাজনার গান শোনা।
নিদ্রাহীনতা সমাধানে রিলাক্সেশন টেকনিক: ঘুম না আসলে কিছু রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। শুয়ে বুক ভরে শ্বাস নিন এবং প্রতিবার শ্বাস আগের তুলনায় গভীর করুন। এরপর পায়ের মাংসপেশি টানটান করে কিছুক্ষণ ধরে রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন। এভাবে প্রতিটি মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণ করুন এবং ভাবুন কোন সুখস্মৃতি সম্পর্কে।
ঘুমের ওষুধ ব্যবহারের ঝুঁকি: অনেকেই আছেন, যারা একটু ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলেই ঘুমের ওষুধ সেবন শুরু করে দেন। তবে এটি একেবারেই উচিত নয়, কারণ ওষুধ সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এবং কিছুদিন পর ওষুধ ছাড়া ঘুম আসতে পারে না। যদি ঘুমের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা উচিত।