সাটুরিয়ার তামাক চাষ: স্বাস্থ্য ও পরিবেশে মারাত্মক ঝুঁকি

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার প্রান্তিক চাষিরা ব্যাপকভাবে তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। অধিক ফলনের আশায় অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তামাকের পাতা শুকানোর জন্য যত্রতত্র তামাক মাচা তৈরি করার কারণে বিষাক্ত দুর্গন্ধ পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তামাক চাষের সাথে জড়িত না থাকলেও শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রায় সকল শ্রেণির মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে।

এদিকে, উপজেলা কৃষি অফিস তামাক চাষিদের এ ধরনের চাষ থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার চেষ্টা করলেও তামাক চাষে তাদের আগ্রহ কমছে না। প্রতিবছরই এই চাষিদের এবং আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, অ্যালার্জি ও শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা গেছে, উপজেলার বরাইদ, উত্তর ছনকা, ফাজিলাবাড়ি, মহেরা, তিল্লি, শিমুলিয়া, সাভার, আগ সাভার, হামজা, জালশুকা, শালুয়াকান্দি, কৌড়ি, গোপালপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বেশিরভাগ তামাক চাষি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, রাস্তার পাশে এবং বাড়ির আঙিনায় বাঁশের মাচা তৈরি করে তামাক শুকাচ্ছেন। রাস্তায় চলাফেরা করতে গিয়ে তামাকের ঝাঁঝালো গন্ধে পথচারীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তামাক শুকানোর পর চাষিরা নিজ বসতঘরে গুদামজাত করছেন, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।

বরাইদ ইউনিয়নের উত্তর ছনকা এলাকার ষাটোর্ধ্ব মো. নূরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী বলেন, “এবার চার বিঘা জমিতে তামাক চাষ করতে গিয়ে ঠান্ডা, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছি। তামাকের গন্ধে মাঝে মাঝে মাথা ঘোরে। যদিও আমি জানি এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তবুও লাভের আশায় তামাক চাষ করছি।”

একই ইউনিয়নের মিজানুর রহমান বলেন, “আমার বাড়ির সামনে বিশাল মাচা করে তামাক শুকানো হচ্ছে। তামাকের গন্ধে আমাদের পরিবার নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছে। এর প্রভাবে আমাদের শ্বাসকষ্ট ও মাথাব্যথা বেড়ে গেছে।”

স্থানীয় ফার্মাসিস্ট মো. আমিনুর রহমান বলেন, “এ বছর তামাক চাষি প্রতিদিনই আমার কাছে ঠান্ডা, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসছেন। আমি তাদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। তামাক শুকানোর জায়গা লোকালয় থেকে দূরে রাখার জন্যও আমি চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি।”

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মামুন উর রশিদ বলেন, “তামাক মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর শ্বাসকষ্ট সহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তামাক শুকানোর সময় যে দুর্গন্ধ ছড়ায়, তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে, যার ফলে মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “তামাক চাষে চাষিদের নিরুৎসাহিত করার জন্য নানা ধরনের প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। তবুও কিছু চাষি তাদের অতি লাভের আশায় তামাক চাষ করছেন। তবে তামাক শুকানোর সময় যত্রতত্র মাচা না করার জন্য চাষিদের সতর্ক থাকতে হবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন
Scroll to Top