ইসরায়েলি অবরোধে তীব্র মানবিক সংকটে পড়েছে গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিরা। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নবজাতক শিশুদের। মায়েরা দুধ কিংবা শিশু ফর্মুলা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে নবজাতকদের মুখে পানি কিংবা অন্যান্য বিকল্প তরল দিচ্ছেন তারা, যা শিশুদের জন্য চরমভাবে ক্ষতিকর।
বৃহস্পতিবার আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজার চিকিৎসক ড. কাহলিল দাকরান জানান, ফর্মুলা দুধের মজুত শেষ হয়ে গেছে। বহু মা নিজেরাই অপুষ্টিতে ভুগছেন, ফলে বুকের দুধও উৎপাদন করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, “দুই বছরের কম বয়সী হাজার হাজার শিশু অনাহারে রয়েছে। তাদের মায়েদেরও খাবার নেই। শিশুর দুধ তো দূরের কথা, মায়ের শরীরেও দুধ তৈরির উপযুক্ত পুষ্টি নেই।”
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, অনেক পরিবার শিশুকে শুধু পানি খাওয়াচ্ছেন, আবার কেউ কেউ শক্ত খাবার গুঁড়ো করে দিচ্ছেন—যা ছোট শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
আজহার ইমাদ, গাজার এক ৩১ বছর বয়সী মা, বলেন—তিনি তার চার মাস বয়সী কন্যা জুরিকে খাওয়ানোর জন্য পানির সঙ্গে তাহিনি (তিল বাটা) মিশিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এতে তিনি নিজেই শঙ্কিত।
“সে এটি খায় না,” বলেন আজহার। “এই মিশ্রণ থেকে সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। মাঝে মাঝে তাকে শুধু পানি দেই। কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। ক্যারাওয়ে ও ভেষজ দিয়ে তৈরি কিছু তরলও চেষ্টা করি—যেকোনো কিছু, শুধু যেন সে বেঁচে থাকে।”
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়। সেই থেকে খাদ্য, পানি, ওষুধ ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ কার্যত বন্ধ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর একাধিকবার অনুরোধ সত্ত্বেও অবরোধ শিথিল হয়নি।
স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শুধু ক্ষুধার কারণে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৯ জনে, যার মধ্যে ৯০ জনই শিশু।